আগরতলা, ১৮ আগস্ট: জনজাতি অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন না হলে ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়ন হবে না। জনজাতিদের ছাড়া রাজ্য কোন সময় এগিয়ে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জনজাতিদের বিকাশে খুবই আন্তরিক। সেই দিশা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় জনজাতি কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ত্রিপুরার বর্তমান সরকারও।
এডিসিতে জনজাতিদের সব অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ৫০টি আসনের প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জনজাতি সমাজপতিদের নিয়ে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে ভোট ব্যাঙ্কের জন্য জনজাতি ভাইবোনদের ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব গ্রহণের পর জনজাতি কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর চিন্তাভাবনা সমাজের অন্তিম ব্যক্তির উন্নয়ন। কারণ তাদের ছাড়া সমাজ, রাজ্য এবং দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই দিশায় সারা দেশে কাজ করে চলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর জন্যই রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনজাতি অংশের দ্রৌপদী মূর্মুকে আসীন করা সম্ভব হয়। যা জনজাতি কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ত্রিপুরা রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও জনজাতি অংশের মানুষ প্রতিনিধিত্ব করছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে যাকে স্থান দেওয়ার সেখানে দেওয়ার মানসিকতা রাখে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা আরো বলেন, কিছুদিনের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময়ে রাজ্যের ডার্লং জনগোষ্ঠীর মানুষকে এসটি সম্প্রদায়ে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে সংসদে বক্তব্য রাখার সৌভাগ্য হয়। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ত্রিপুরা রাজ্যে ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার কিছু উপ গোষ্ঠী রয়েছে। এডিসিতে বর্তমানে ২৮টি আসন রয়েছে। কিন্তু জনজাতি সম্প্রদায় থেকে যাতে সব গোষ্ঠীর মানুষ প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় এজন্য রাজ্য সরকার ৫০টি আসনের জন্য ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লির কাছে পাঠিয়েছে। কারণ এই সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে বিশ্বাস করে। সেই দিশায় কাজ করছে সরকার। এত বছর ধরে ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে সম্মান জানাতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। কিন্তু এই সরকার রাজ পরিবারকে যোগ্য সম্মান দিতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। আগরতলা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর করা হয়েছে। যা খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের হাতে উদ্বোধন করেছেন।
কর্মশালায় আলোচনা করতে গিয়ে প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা জানান, এই সরকার প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনাকে সামনে রেখে রাজ্যের আপামর জনসাধারণের জন্য কাজ করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে জনজাতি সমাজপতিদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের জনকল্যাণমুখী চিন্তাভাবনা সমাজের একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। এডিসির সার্বিক উন্নয়নেও এই সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে।
হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য এডিসিকে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের সহযোগী আরো ৩৯টি দপ্তরের মাধ্যমে এডিসির উন্নয়নে ৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার সত্যিকার অর্থে সমস্যা সমাধান করতে চায়। অথচ আগে যারা সরকারে ছিল তারা সমস্যা সৃষ্টি করে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চাইতো। আজকের অনুষ্ঠানে পাগড়ি জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি পরিয়ে যেভাবে সম্মানিত করা হলো তাতে খুবই গর্বিত ও সম্মানিত হয়েছি বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ত্রিপুরার জনজাতিদের রিসা এখন দেশ ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এই রিসা পাঠানোর জন্য বাইরে থেকে ফোন কল আসে এবং রিসা পাঠিয়ে দিতে হয়। জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন সংসদ ভবনেও ত্রিপুরার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। যা আমাদের প্রত্যেকের গর্বের বিষয়।