বিরামহীন মহাযুদ্ধের অষ্টম দিনে ভয়াবহতা উৎকণ্ঠা বাড়ছে ইউক্রেনের বাসিন্দা সহ ভারত থেকে পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের। রাশিয়ার এবং ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেন ছাড়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর থেকেই সেখানকার সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এই মূহুর্তে রাশিয়া-ইউক্রেনের মহাযুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের যেভাবেই হোক নিজ নিজ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। ক্ষমতা দখলের লড়াই দিন প্রতিদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ।ইউক্রেন দখল করতে রাশিয়া মরিয়া হয়ে রেলপথ থেকে শুরু করে জলপথ ধ্বংসাত্মক হামলায় একেবারে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে । ইতিমধ্যেই একাধিক শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনে (Ukraine)। ক্রমাগত চলছে গুলি বোমা। এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৩৯৫ জন ব্যাক্তি, দাবি ইউক্রেনের।
এইরুপ পরিস্থিতিতে কোনো মতেই ইউক্রেনের মাটি ত্যাগ করা সম্বব নয় যদি না কোনো দেশের সরকার উদ্যোগী না হয়। একমাত্র ভরসা আকাশ মাধ্যমে নিজ দেশের মাটিতে ফেরত আসা। ইউক্রেনে এখনও আটকে রয়েছেন হাজার হাজর ভারতীয়। তাঁদের উদ্ধারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাশিয়ার কাছেও এই বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এরপর, গতরাতে ইউক্রেনের খারকিভে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য ছয় ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাশিয়া। এই সময়ের মধ্যে রুশ সেনারা কোনও হামলা চালায়নি খারকিভে। ভারতের আবেদনে রাশিয়া এই বিশাল এক্সটেনশন দিয়েছে। এটি ভারতীয় কূটনীতি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচেষ্টার একটি বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল রাতে ফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরপর ছয় ঘণ্টার জন্য খারকিভে হামলা বন্ধ রাখা হয়। খবরে বলা হয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে এসব হামলা বন্ধ করা হয়। এরপর থেকেই দায়বদ্ধতার জন্য দেশের মাটিতে ফেরত আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মতন পশ্চিমবঙ্গ থেকে পড়ুয়া রা ফিরে আসতে শুরু করেছে।
যেমন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের নিমতৌড়ির ভৌমিক পরিবারের। নিমতৌড়ির দেবতোষ ভৌমিকের মেয়ে সনিয়া ভৌমিক মেডিকেলে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলো ইউক্রেনে।তবে গত একসপ্তাহ ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের ফলে রীতিমতো উৎকন্ঠায় ছিলো ভৌমিক পরিবার।অবশেষে উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে শেষমেষ ভারত সরকারের সহযোগিতায় রাত আড়াইটের সময় সোনিয়া কে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।আর যার ফলে রীতিমতো খুশির জোয়ার এনেছে ভৌমিক পরিবারে। সোনিয়া ইউক্রেনের টার্ন অফ ন্যাশান্যাল মেডিক্যাল ইউনিভারসিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সোনিয়ার কথায়,গতকয়েকদিন চরম আতঙ্কে দিন কেটেছে। অবশেষে ভারত সরকারের সহযোগীতা পেয়ে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারত সরকারকে।যুদ্ধ বিরতী ঘটলেও আদৌ পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে যাবেন কিনা তা এ মুহুর্তে ভেবে উঠতে পারছেন না।সব মিলিয়ে এই মুহুর্তে খুশির হাওয়া নিমতৌড়ির ভেমিক পরিবারে।
অপরদিকে হুগলির হিন্দমোটর রবীন্দ্র নগরের বাসিন্দা দেবমাল্য চ্যাটার্জীও ডাক্তারি পড়তে গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পরেছিলেন।রোমানিয়ার বুচারেস্ট হয়ে দিল্লী ফিরলেন তিনি।পশ্চিম ইউক্রেনের টারনোপিল কলেজে ডাক্তারী পড়তে গিয়েছিলেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেবমাল্য। ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা দিন গুনছিলেন বাবা দেবাশিষ চ্যাটার্জি ও মা মনোমিতা চ্যাটার্জি।দেবমাল্য জানান,ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স তাদের রোমানিয়ার বুচারেস্ট এয়ারপোর্ট থেকে দিল্লী ফিরিয়ে নিয়ে আসে গতকাল।বর্তমানে তারা বঙ্গভবনে রয়েছেন।
দেবমাল্যর মা বলেন,খুবই উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ছিল মনে, ছেলে দেশে ফেরায় সেটা কেটেছে।ভারতীয় দূতাবাস থেকে ব্যবস্থা করে ওদের যেভাবে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে তার জন্য কৃতজ্ঞ তারা।ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাস থেকে পড়ুয়াদের রোমানিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।সেখানে বেসক্যাম্পে দুদিন ছিল।ভারতীয় বায়ু সেনার বিমান তাদের উদ্ধার করে গাজিয়াবাদে নিয়ে আসে।সেখান থেকে দিল্লী।আজ বিকালের দিকে হয়ত বিমানের ব্যবস্থা হলে বাড়ি ফিরবে দেবমাল্য।
এরই পাশাপাশি অবশেষে ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরল হাওড়া বেলুড়ের বাসিন্দা অন্বেষা দাস(২১)। উইক্রেনের টার্নপিল মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে এম বি বি এস পড়তে গিয়ে আটক হাওড়ার বেলুড়ের প্যায়ারী মোহন মুখার্জি রোডের বাসিন্দা অন্বেষা। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে পড়ে। দিনের বেলা ১বেলা ইন্ডিয়ান মেস চালু থাকলেও রাতের বেলায় বিস্কুট, ড্রাই ফুড খেয়েই কাটাতে হতো। রাতে ঘরের মধ্যে অন্ধকারে থাকতে হতো। সাইরেন বাজলেই ছুটতে হতো বাঙ্কারে। অবশেষে ইউক্রেনের বর্ডার পার হতে কিছুটা বাসে, খানিকটা হেঁটে বর্ডার করে, কোনক্রমে ঘরে ফেরা। বাড়ি ফিরে খুবই খুশি অন্বেষা। পাশাপাশি ঘরের মেয়ে ঘরে ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া বেলুড়ের প্যায়ারী মোহন মুখার্জি রোডের বাসিন্দা অন্বেষার বাড়িতে।